যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’র নামফলক উন্মোচন করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন রাস্তার পুন:নামকরণ ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’র রুপকার স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
আগ্রহী হলে ক্লিক করুন (www.bdwebsite.net)
এসময় উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সংগ্রামী আহবায়ক জনাব এ কে এম তারিকুল হায়দার চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের অসংখ্য নেতৃবৃন্দ।
নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শতশত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে জড়ো হয়ে রাস্তার পুন:নামকরণের উদ্যোগ নেওয়ায় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারোসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জ্যামাইকা এলাকার হিলসাইড এভেন্যু থেকে হোমলন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত রাস্তার পুন:নামকরণ করা হয় ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরো বা পৌরসভার মধ্যে কুইন্সের জ্যামাইকা অন্যতম। যদিও অপর দুই বরো ব্রুকলিন ও ব্রঙ্কসেও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বাস করেন। ব্রঙ্কসে ইতোমধ্যেই একটি সড়কের নামকরণ ‘বাংলা বাজার’ করা হয়েছে। অনুরূপ প্রক্রিয়া চলছে ব্রুকলিনেও। তবে কুইন্সের জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউ’র সাটফিন থেকে শুরু করে কুইন্স ভিলেজসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করছেন।
বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করছেন জ্যামাইকা এলাকায়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারকে কেন্দ্র করে সেখানে বিস্তৃতি ঘটেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের। গড়ে উঠেছে একটি চমৎকার পরিবেশ। স্থানীয় হিলসাইড অ্যাভিনিউতে সাটফিনের ১৪৪ স্ট্রিট থেকে ১৭৫ স্ট্রিট পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশিদের ব্যবসা বাণিজ্য। এলাকাটি এখন এক টুকরো বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। আর এই এক টুকরো বাংলাদেশকেই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ।
জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউ ১৪৪ স্ট্রীট থেকে বাংলাদেশি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্র বিন্দুকে ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’ নামকরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৬৯ স্ট্রিট, হোমলন স্ট্রিট ও হিলসাইড অ্যাভিনিউ’র সংযোগস্থলটি প্রাধান্য পেয়েছে এই নামকরণের কেন্দ্র হিসেবে। এর আগে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনে ১৬৮ স্ট্রিটটির নামকরণ করা হয় ‘জেএমসি ওয়ে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল নিউইয়র্ক সিটিতে অভিবাসী বাংলাদেশিদের একটি বৃহৎ সমাজ গড়ে উঠেছে। শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই দু’লক্ষাধিক বাংলাদেশি বসবাস করছেন। বহুজাতিক এ নগরীর কুইন্স কাউন্টি গোটা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৃহত্তম কাউন্টি। কুইন্সের ৪৭ শতাংশ বাসিন্দাই অভিবাসী। বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশের বসবাস কুইন্সের জ্যামাইকায়।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’র’ সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়। এই বিল পাশে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারোর এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমেই বাংলাদেশ বা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে জ্যামাইকায় একটি রাস্তার নামকরণ করার দাবি ওঠে। সেই দাবির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কাউন্সিলম্যান জিম এফ জিনারোর মাধ্যমে কুইন্স বরো হল ও সিটি প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চলছিলো। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি গ্রুপ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে একটি রাস্তার নামকরণের দাবি তোলেন। অপর একটি মহল ‘বাংলাদেশ’ নামে রাস্তার নামকরণের দাবি করেন যাতে কোন রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি না হয়। পরিশেষে ‘লিটন বাংলদেশ অ্যাভিনিউ’ নামকরণ চুড়ান্তকরণ করা হয়। বিলের নম্বর আইএনটি ২৪৭৭-২০২১। সিটি কাউন্সিলে বিলটি উত্থাপন করেন স্থানীয় কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে সিটির ১৯৯টি রাস্তার নাম বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশের নামে পুন:নামকরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘লিটল বাংলাদেশ অ্যাভিনিউ’ও নামও ছিল।